ফটোগ্রাফি টিউটোরিয়াল : ভাল ছবি উঠানোর নিয়মকানুন
ক্যামেরা যত ভাল ছবিও তত ভাল, কথাটা কিছুটা সত্য তো বটেই। কিন্তু সাধারন ক্যামেরা ব্যবহার করে চমৎকার ছবি উঠানোর উদাহরন কম নেই। দামী এসএলআর হোক আর সাধারন পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরা হোক অথবা মোবাইল ফোনের ক্যামেরাই হোক, কিছু নিয়ম মেনে যে কেউ সুন্দর ছবি উঠাতে পারেন। পেশাদার ফটোগ্রাফাররা যে নিয়ম মেনে ছবি উঠান সেগুলি একবার জেনে নিন। ছবির বিষয় ঠিক করুন ক্যামেরায় ক্লিক করলে ছবি উঠবে। ক্যামেরার সামনে যা আছে সেটাই পাবেন। তাকে কি ভাল ফটোগ্রাফ বলা যায়! ছবি উঠানোর আগে ছবিকে শিল্পীর আকা ছবির সাথে তুলনা করুন। তিনি অনেক ভেবেচিন্তে যা বক্তব্য সেটা ফুটিয়ে তোলেন। ফটোগ্রাফার হিসেবে আপনার সেটাই দায়িত্ব। কাজেই ছবি উঠানোর আগে একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন, কিসের ছবি উঠাচ্ছি। এর বক্তব্য কি ? কোন ব্যক্তির ছবি উঠালে তার পোষাক, পরিবেশ, আলো এগুলি তারসাথে মানানসই কি-না। কাজেই ছবি উঠানোর প্রথম নিয়ম, ছবির বক্তব্য ঠিক করুন। যে ছবিই উঠান না কেন, একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন কিসের ছবি উঠাচ্ছেন। ছবির বক্তব্য কি। অন্য কোনভাবে উঠালে কি ছবি আরেকটু ভাল হত ? দিনের অন্য সময়ে, কিংবা কৃত্রিম আলো ব্যবহার করে। তিনের নিয়ম ছবি উঠানোর সময় ফটোগ্রাফাররা সাধারনভাবে যা করেন, দিগন্ত রেখা ছবির মাঝামাঝি রেখে ফ্রেম করেন। অর্থাত আপনার সামনে যদি মাঠ এবং আকাশ থাকে তাহলে মাঠের জন্য অর্ধেক এবং আকাশের জন্য অর্ধেক এভাবে ভাগ করে নেন। কিংবা সমুদ্র এবং আকাশ থাকে তাহলে অর্ধেক আকাশ এবং অর্ধেক পানি এভাবে ছবি উঠান। একে অনেকে তুলনা করে খেলার ড্র এর সাথে তুলনা করেন। কে বিজয়ী জানা নেই। ফটোগ্রাফির একটি গুরুত্বপুর্ন নিয়ম রুল অব থ্রি এর পরিপন্থী। হাজার বছর ধরে রুল অব থ্রি প্রচলিত। নিয়ম হচ্ছে, দুভাগ একজনকে বাকি একভাগ আরেকজনক দিন। বিষয়ের গুরুত্ব অনুযায়ী। যদি সমুদ্র গুরুত্বপুর্ন হয় দিগন্তরেখা তিনভাগের দুভাগ ওপরে রাখুন, যদি আকাশ গুরুত্বপুর্ন হয় তাহলে আকাশকে তিনভাগের দুভাগ দিন। অনায়াসে সুন্দর ছবি পাবেন। পুরো ছবি উঠান আপনি একটি সুন্দর ফুলের ছবি উঠাতে চান। অনেকগুলি ফুলের মধ্যে একটি ফুল আপনার কাছে গুরুত্বপুর্ন। বাগানের ছবি উঠানোর পর সেই ছবি কাউকে দেখানোর পর লক্ষ্য করলেন তারা সেই বিশেষ ফুলটি লক্ষ্য করছে না। কারন একটিই, আপনি সেভাবে ছবি উঠাননি। যদি ফুলের ছবি উঠাতে হয় যতটা সম্ভব কাছে থেকে ছবি উঠান। এমনভাবে যেখানে সেই ফুলটিই ছবির অধিকাংশ যায়গা জুড়ে থাকে। অন্য ফুলগুলির কাজ এই বিশেষ ফুলের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলা। ফুল না হয়ে যদি বিশেষ কোন বস্তু, এমনকি কোন ব্যক্তির বিষয়ও হয় তাহলেও এই নিয়মে ছবি উঠান। নিজেকে বলতে পারেন, ছবি উঠানোর পর ফটোশপে পাশ থেকে বাদ দেয়া যাবে। সেটা না করে ছবি সেভাবে উঠানো অভ্যেস করুন। ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে, ছবি ভাল হয়নি কারন আপনি যথেষ্ট কাছে যাননি। কাজেই, ছবি উঠানোর জন্য যতটা সম্ভব কাছে যান, অথবা লেন্স পাল্টান অথবা জুম ব্যবহার করুন। পোর্ট্রেট মোডে ছবি উঠান সাধারনত অধিকাংশ ছবি উঠানো হয় ল্যান্ডস্কেপ মোডে, পাশের দিকে বেশি যায়গা রেখে। অথচ ক্যামেরা ঘুরিয়ে সেই ছবিকেই লম্বালম্বিভাবে ছবি উঠানো সম্ভব। একজন দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তির ছবি ল্যান্ডস্কেপ মোডে উঠালে পাশে অনেক অপ্রয়োজনীয় যায়গা থেকে যায়। অথচ লম্বলম্বিভাবে উঠালে তাকে আরো ভালভাবে দেখানো সম্ভব। ভুলে যাবেন না, এজন্যই এর নাম পোর্ট্রেট মোড। কোন ছবি কোনভাবে উঠালে ভাল হবে এর কোন ধরাবাধা নিয়ম নেই। একই ছবি যেকোনভাবেই সুন্দর হতে পারে। সবসময় ল্যান্ডস্কেপ মোডে না উঠিয়ে একবার নিজেকে বলুন, এই ছবিটাই একটা পোর্ট্রেট মোডে তুলে দেখি না কি হয়। ফ্রেমের মধ্যে ফ্রেম প্রিন্ট করা ছবি আমরা ফ্রেমে রাখি, ডিজিটাল ছবির চারিদিকেও ফ্রেম ব্যবহার করা হয়। ইচ্ছে করলে ছবি উঠানোর সময় কোনকিছুকে ফ্রেম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। প্রকৃতি, গাছের পাতা, দেয়াল থেকে শুরু করে নিজের হাত, যেকোন কিছুই ফ্রেম হিসেবে ছবির সৌন্দর্য বাড়াতে পারে। ব্যাকগ্রাউন্ডের দিকে দৃষ্টি দিন ঘরে অথবা বাইরে যেখানেই ছবি উঠান না কেন, পেছনে কি রয়েছে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। ছবি উঠানোর সময় যদি অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তির উপস্থিতি থাকে তাহলে কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন। পেছন থেকে কেউ উকি দিচ্ছে দেখা গেলে ভাল ছবি হয় না। একইভাবে অপরিস্কার, অগোছালো কিছু থাকলে সেগুলি এড়িয়ে ছবি উঠান। সামান্য সরে গেলেই এই বিষয়গুলি এড়িয়ে ভাল ছবি পাওয়া যাবে। শুধুমাত্র তাত্ত্বিক জ্ঞানে ভাল ছবি পাওয়া যায় না। ভাল ছবির পাওয়ার সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হচ্ছে ছবি উঠানোর পর সেখানে কোন ত্রুটি আছে কিনা বের করা এবং কি করলে আরো ভাল ছবি পাওয়া যেত সেটা বের করা। কাজেই যত বেশি ছবি উঠাবেন তত ভাল ছবি পাওয়ার সম্ভাবনা।